কাজে আসছে না ৫০০ অ্যাপ


সরকারের উদ্যোগে তৈরি ৫০০ অ্যাপস সাধারণ মানুষের কাজে আসছে না। কারণ, গুগল প্লে স্টোরে এসব অ্যাপ নেই। আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইটে থাকলেও স্মার্টফোনে সেগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করা বেশ জটিল। এসব অ্যাপ ব্যবহারে সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তুলতে কোনো প্রচারণাও নেই।
দুই বছর আগে ২০১৫ সালে ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ সাড়ে ৯ কোটি টাকা খরচ করে ৫০০ মোবাইল অ্যাপস তৈরি করেছিল। সে সময় আইসিটি বিভাগ বলেছিল, এসব অ্যাপ ডিজিটাল বিপ্লব আনবে। স্মার্টফোনে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য বাংলা ভাষায় তথ্যভান্ডার তৈরি হবে।
গত ২৪ জুলাই অ্যাপগুলো কাজে না আসার বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও প্রশ্ন তুলেছেন। বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, তারানা হালিম বলেন যে অনেক অ্যাপ আছে যেগুলো ব্যবহার করা যায় না। ডাউনলোড করতে গেলে ৫০০ অ্যাপের মধ্যে ৩টি ছাড়া বাকিগুলো ভালো কাজ করে না। এত টাকা খরচ করে যেসব অ্যাপ বানানো হয়েছে, সেগুলো কেন কাজ করে না, তা বিস্তারিত জানা দরকার।
গত মঙ্গলবার আইসিটি সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতদূর জানি, ৫০০ অ্যাপের প্রতিটি কাজ করে, সেটি নিশ্চিত হয়েই এগুলো গুগল প্লে স্টোরে রাখা হয়েছিল। অ্যাপগুলো এখন কেন সেখানে নেই বা কোন অ্যাপটি কাজ করে না, এ বিষয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভালো বলতে পারবেন।’
সচিবের পরামর্শে এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের উপপ্রকল্প পরিচালক নবির উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও দক্ষ অ্যাপ ডেভেলপার তৈরির লক্ষ্যে এসব অ্যাপ তৈরি করা হয়েছিল। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার গত মে মাসে যুক্তরাজ্য থেকে ‘গ্লোবাল মোবাইল গভ অ্যাওয়ার্ড’ নামের একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে। অ্যাপগুলোর আরও উন্নয়নের জন্য আরেকটি প্রকল্পে এগুলোকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলা যায়নি। এর আগে তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে ও একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
প্রকল্প চালুর এক বছর পর ২০১৫ সালের ২৬ জুলাই ৫০০ অ্যাপ উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল, 
অ্যাপগুলো আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইট ও গুগল প্লে স্টোরে রাখা হবে। সেখান থেকে তা বিনা মূল্যে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যাবে। ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নয় মাস অ্যাপগুলো গুগল প্লে স্টোরে ছিল বলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে। এরপর সেখান থেকে অ্যাপগুলো সরিয়ে ফেলে গুগল। এখন শুধু আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইটে অ্যাপগুলো রয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাইরের ওয়েবসাইটে থাকা অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে চালানো হলে এর নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে না গুগল। আর সাধারণ মানুষ মূলত গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে। এ কারণে এসব অ্যাপের ব্যবহার জটিল, সাধারণ মানুষের তা কাজে আসার কথা নয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল এথিকস অ্যাডভান্স টেকনোলজি লিমিটেড (ইএটিএল)। অ্যাপগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে ইএটিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইএটিএলের দায়িত্ব ছিল আইসিটি বিভাগের পক্ষে অ্যাপগুলো তৈরি করে দেওয়া, সেটি সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে করা হয়েছে। ৫০০ অ্যাপসের প্রতিটির কার্যকারিতা আলাদা করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অ্যাপগুলো কাজ করে না, এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।’
অ্যাপগুলো এখন কেন গুগল প্লে স্টোরে নেই, এমন প্রশ্নের উত্তরে এম এ মুবিন খান বলেন, নীতিমালার পরিবর্তনের কারণে গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপগুলো সরিয়ে দিয়েছে। সেগুলো আবার প্লে স্টোরে রাখতে হলে বাংলাদেশ সরকার ও গুগলের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ মানুষ যাতে এই ৫০০ অ্যাপের বিষয়ে জানতে পারে এবং ব্যবহারে আগ্রহী হয়, সে জন্য প্রচারণা চালাতে ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল প্রকল্পে। এই টাকা খরচ না হওয়ায় তা আবার সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। অথচ এখন প্রচারণার অভাবে অ্যাপগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানতে পারছে না।
৫০০ অ্যাপের মধ্যে ৩০০ অ্যাপ ছিল সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার তথ্যসংবলিত। বাকি ২০০ অ্যাপ আচার তৈরির উপায়, ওষুধ খাওয়ার নিয়মসহ বিভিন্ন সৃজনশীল ধারণার ওপর তৈরি করা হয়। অ্যাপ তৈরির পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অ্যাপ তৈরিতে দক্ষ করে গড়ে তোলাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশে এখন আর অর্থের অভাব নেই। কিন্তু অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারার দক্ষতার অভাব রয়েছে। তার প্রমাণ এ ধরনের অ্যাপ বানানোর প্রকল্প। দায়বদ্ধতার অভাবে জনগণের অর্থ এভাবে অপচয় করা হচ্ছে।
Share on Google Plus

About Tangail24

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন